"হৃদয়ে বড়দিন" - ৭ দিনের ভিডিও পরিকল্পনার ৫ম দিন
বাংলা বড়দিন ফিল্ম - ৭ দিনের ৫ম দিন
বাইবেলের পাঠ সমূহঃ
১ম পাঠ: মার্ক ১৪:৩২-৬৪
32এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”
33এই বলে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিজের সংগে নিলেন এবং মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট পেতে লাগলেন। 34তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে জেগে থাক।”
35তার পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করলেন যেন সম্ভব হলে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে দূর হয়। 36তিনি বললেন, “আব্বা, পিতা, তোমার কাছে তো সবই সম্ভব। এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে তুমি নিয়ে যাও। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।”
37এর পরে তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন, তুমি ঘুমাচ্ছ? এক ঘণ্টাও কি জেগে থাকতে পার নি? 38জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরের ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”
39পরে যীশু আবার গিয়ে সেই একই প্রার্থনা করলেন। 40ফিরে এসে তিনি দেখলেন আবার তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল। শিষ্যেরা যীশুকে কি উত্তর দেবেন বুঝলেন না। 41তৃতীয় বার ফিরে এসে তিনি তাঁদের বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ আর বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে। সময় এসে পড়েছে। দেখ, মনুষ্যপুত্রকে এখন পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 42ওঠো, চল আমরা যাই। যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।”
শত্রুদের হাতে প্রভু যীশু
(মথি 26:47-56; লূক 22:47-53; যোহন 18:2-12)
43যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা, ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন।
44যীশুকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে-ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।” 45তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল। 46তখন সেই লোকেরা যীশুকে ধরল। 47যাঁরা যীশুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং মহাপুরোহিতের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।
48যীশু সেই লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? 49আমি তো প্রত্যেক দিনই আপনাদের মধ্যে থেকে উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দিতাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। অবশ্য শাস্ত্রের কথা পূর্ণ হতে হবে।”
50সেই সময় শিষ্যেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। 51একজন যুবক কেবল একটা চাদর পরে যীশুর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। 52লোকেরা যখন তাকে ধরল তখন সে চাদরখানা ছেড়ে দিয়ে উলংগ অবস্থায় পালিয়ে গেল।
মহাসভার সামনে যীশু
(মথি 26:57-68; লূক 22:54,55, 63-71; যোহন 18:19-24)
53সেই লোকেরা যীশুকে নিয়ে মহাপুরোহিতের কাছে গেল। সেখানে প্রধান পুরোহিতেরা, বৃদ্ধ নেতারা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা একসংগে জড়ো হলেন। 54পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পিছনে যেতে যেতে মহাপুরোহিতের উঠানে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে রক্ষীদের সংগে বসে তিনি আগুন পোহাতে লাগলেন।
55প্রধান পুরোহিতেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন, কিন্তু কোন সাক্ষ্যই তাঁরা পেলেন না। 56যীশুর বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না। 57তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল, 58“আমরা ওকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরী এই উপাসনা-ঘর আমি ভেংগে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে এমন একটা উপাসনা-ঘর তৈরী করব যা মানুষের তৈরী নয়।’ ” 59কিন্তু তবুও তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
60তখন মহাপুরোহিত সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কোন উত্তরই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এই লোকেরা এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 61যীশু কিন্তু উত্তর না দিয়ে চুপ করেই রইলেন।
মহাপুরোহিত আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি পরমধন্য ঈশ্বরের পুত্র মশীহ?”
62যীশু বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্রকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আকাশে মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”
63এতে মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার? 64আপনারা তো শুনলেনই যে, ও ঈশ্বরকে অপমান করল। আপনারা কি মনে করেন?”
তাঁরা সবাই যীশুকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন।
২য় পাঠ: মথি ২:১-১৫
1যিহূদিয়া প্রদেশের বৈৎলেহম গ্রামে যীশুর জন্ম হয়েছিল। তখন রাজা ছিলেন হেরোদ। পূর্বদেশ থেকে কয়েকজন পণ্ডিত যিরূশালেমে এসে বললেন, 2“যিহূদীদের যে রাজা জন্মেছেন তিনি কোথায়? পূর্ব দিকের আকাশে আমরা তাঁর তারা দেখে তাঁকে প্রণাম করতে এসেছি।”
3এই কথা শুনে রাজা হেরোদ এবং তাঁর সংগে যিরূশালেমের অন্য সকলে অস্থির হয়ে উঠলেন। 4হেরোদ সমস্ত প্রধান পুরোহিত ও ধর্ম-শিক্ষকদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন মশীহ কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন। 5তাঁরা তাঁকে বললেন, “যিহূদিয়ার বৈৎলেহম গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন, কারণ নবী এই কথা লিখেছেন:
6যিহূদা দেশের বৈৎলেহম,
যিহূদার মধ্যে তুমি কোনমতেই ছোট নও,
কারণ তোমার মধ্য থেকেই
এমন একজন শাসনকর্তা আসবেন
যিনি আমার ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করবেন।”
7তখন হেরোদ সেই পণ্ডিতদের গোপনে ডাকলেন এবং জেনে নিলেন ঠিক কোন্ সময়ে তারাটা দেখা গিয়েছিল। 8তিনি পণ্ডিতদের এই কথা বলে বৈৎলেহমে পাঠিয়ে দিলেন, “আপনারা গিয়ে ভাল করে সেই শিশুটির খোঁজ করুন। তাঁকে খুঁজে পেলে পর আমাকে জানাবেন যেন আমিও গিয়ে তাঁকে প্রণাম করতে পারি।”
9রাজার কথা শুনে পণ্ডিতেরা চলে গেলেন। তাঁরা পূর্ব দিকে যে তারাটা দেখেছিলেন সেই তারাটা তাঁদের আগে আগে চলল। শিশুটি যেখানে ছিলেন সেই ঘরের উপরে এসে না থামা পর্যন্ত তারাটা চলতেই থাকল। 10-11তারাটা দেখে পণ্ডিতেরা খুব আনন্দিত হয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন এবং সেই শিশুটিকে তাঁর মা মরিয়মের কাছে দেখতে পেলেন। তখন তাঁরা মাটিতে উবুড় হয়ে সেই শিশুটিকে প্রণাম করলেন এবং তাদের বাক্স খুলে তাঁকে সোনা, লোবান ও গন্ধরস উপহার দিলেন। 12পরে ঈশ্বর স্বপ্নে তাঁদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা হেরোদের কাছে ফিরে না যান। তখন তাঁরা অন্য পথে নিজেদের দেশে ফিরে গেলেন।
প্রভু যীশুর খোঁজে হেরোদ
13পণ্ডিতেরা চলে যাবার পর প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোষেফকে দেখা দিয়ে বললেন, “ওঠো, ছেলেটি ও তাঁর মাকে নিয়ে মিসর দেশে পালিয়ে যাও আর আমি যতদিন না বলি ততদিন পর্যন্ত সেখানেই থাক, কারণ ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য হেরোদ তাঁর খোঁজ করবে।”
14-15তখন যোষেফ উঠে সেই ছেলে ও তাঁর মাকে নিয়ে সেই রাতেই মিসরে রওনা হলেন এবং হেরোদের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই রইলেন। এটা ঘটল যাতে নবীর মধ্য দিয়ে প্রভু এই যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়:
আমি মিসর থেকে আমার পুত্রকে ডেকে এনেছিলাম।
৩য় পাঠ: মার্ক ১৫:১-৫
1প্রধান পুরোহিতেরা খুব ভোরে বৃদ্ধ নেতাদের, ধর্ম-শিক্ষকদের ও মহাসভার সমস্ত লোকদের সংগে একটা পরামর্শ করলেন। তারপর তাঁরা যীশুকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন। 2তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?”
যীশু উত্তর দিলেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।”
3প্রধান পুরোহিতেরা যীশুর নামে অনেক দোষ দিলেন। 4এতে পীলাত আবার যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি উত্তর দেবে না? দেখ, তারা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে।”
5যীশু কিন্তু আর কোন উত্তরই দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হলেন।
৪র্থ পাঠ: মার্ক ১৫:১২-১৪
12পীলাত আবার লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমরা যাকে যিহূদীদের রাজা বল তাকে নিয়ে আমি কি করব?”
13লোকেরা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
14পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?”
কিন্তু লোকেরা আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
৫ম পাঠ: মার্ক ১৫:১৬-২৩
16তারপর সৈন্যেরা যীশুকে নিয়ে প্রধান শাসনকর্তার বাড়ীর ভিতরে গেল। সেখানে তারা অন্য সব সৈন্যদের একত্র করল। 17তারা যীশুকে বেগুনে কাপড় পরাল, আর কাঁটা-লতা দিয়ে একটা মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল। 18তার পরে তারা যীশুকে বলতে লাগল, “যিহূদী-রাজ, জয় হোক!”
19তারা একটা লাঠি দিয়ে যীশুর মাথায় বারবার মারতে লাগল এবং তাঁর গায়ে থুথু দিল, আর হাঁটু পেতে তাঁকে সম্মান দেখাবার ভান করল। 20এইভাবে তাঁকে ঠাট্টা-তামাশা করবার পর তারা সেই বেগুনে কাপড় খুলে নিয়ে তাঁকে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল এবং ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল।
ক্রুশের উপর প্রভু যীশু
(মথি 27:32-44; লূক 23:26-43; যোহন 19:17-27)
21সেই সময় শিমোন নামে কূরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে এসে সেই পথে যাচ্ছিলেন। ইনি ছিলেন আলেকসান্দর ও রূফের বাবা। সৈন্যেরা তাঁকে যীশুর ক্রুশটা বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল। 22তারা যীশুকে গল্গথা, অর্থাৎ মাথার খুলির স্থান নামে একটা জায়গায় নিয়ে গেল। 23পরে তারা যীশুকে গন্ধরস মিশানো সির্কা খেতে দিল, কিন্তু তিনি তা খেলেন না।